#ধর্ম তিনভাবে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করছে।
১. সরাসরি এসব কর্মকান্ড- নিষিদ্ধ করে দিয়ে।
২. এসব কাজের কারণ বা রুট চিহ্নিত করে তা নিষিদ্ধ করে দিয়ে।
৩. কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন বাধ্যতামূলক করে দিয়ে।
#নৈতিক অবক্ষয় বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত ও উচ্চারিত দুটি শব্দের দ্বারা গঠিত একটি ছোট্ট বাক্য। শব্দ দুটির একটি ইতিবাচক, অপরটি নেতিবাচক। প্রথমটির ব্যত্যয় দ্বিতীয়টি। প্রথমটিতে নিয়মনীতি, সততা, শিষ্টাচারিতা ইত্যাদি মানার কথা। আর দ্বিতীয়টিতে আছে এসব না মানার কথা। শব্দ দুটি একসঙ্গে উচ্চারিত হওয়া মানে মানব সমাজে একটি ভয়াবহ বা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির উদ্ভব, যা কিছু পথভ্রষ্ট মানুষ দ্বারা সৃষ্ট।
#প্রাণিজগতে অনেক প্রাণীই সমাজবদ্ধভাবে চলাচল করে। তন্মধ্যে মানুষ অন্যতম। মানুষের একটি পরিচয়ও সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে। যেহেতু মানুষ একা একা চলতে পারে না, একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে হয়। সে জন্য দরকার হয় কিছু নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধানের। আর এ নিয়ম-নীতির উদ্ভব ঘটে কিছুটা সামাজিক প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, কিছুটা রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনের মাধ্যমে। এভাবে উদ্ভূত নিয়ম-নীতিগুলোর ব্যবহার থেকে সৃষ্টি হয় মূল্যবোধের, যা ধীরে ধীরে স্থায়ী ও চিরন্তন রূপ লাভ করে। এ প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ মেনে চলাই হচ্ছে নৈতিকতা। আর এর যে কোনো ধরনের ব্যত্যয়ই হচ্ছে অবক্ষয়।
#সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্ম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধের ব্যত্যয় বন্ধ করার জন্যও আবার দরকার সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মের। কারণ মানুষ অন্যায় করা থেকে বিরত থাকে সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মের ভয়ে। তাই সুশীতল সমাজ বিনির্মাণের জন্য এর কোনোটারই প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকার করা যায় না। যদিও রাষ্ট্র ও ধর্মের প্রয়োজনীয়তার কথা অনেকে অস্বীকার করে থাকে। কেউ কেউ আবার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করলেও ধর্মের প্রয়োজনীয়তার কথা অস্বীকার করে। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, ইতিহাসের সাক্ষ্য হচ্ছে, মানব সভ্যতার যেদিন শুরু সেদিন থেকেই মানব মনে ধর্মবিশ্বাসের উদ্ভব হয়েছে এবং অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে তা বিরাজ করে চলছে। দাপটের সঙ্গে চলছে বলাটাও কম বলা হবে; বরং সুশীল মানুষ সৃষ্টিতে সমাজ ও রাষ্ট্র যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ধর্ম পূর্ণ সফলতা দেখিয়েছে।
#নৈতিক অবক্ষয়ের উদগীরণ বা জন্ম যেহেতু সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্য থেকে, সে কারণে সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে নীতিবহির্ভূত ও অশালীন কাজ যারা করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা, ঘৃণা করা এবং মর্যাদার কোনোরূপ অংশীদার না করা। আর রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে বিচারের মাধ্যমে এদের শাস্তি নিশ্চিত করা। সমাজ ও রাষ্ট্র প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। অশালীন ও অসামাজিক কাজ কোনো সময়ই সামাজিকভাবে প্রমাণ রেখে করা হয় না। অন্তরালেই হয়ে থাকে। ফলে এরা সমাজ ও রাষ্ট্রের নাগালের বাইরে থেকে যায়। সামাজিক বিধান ও রাষ্ট্রীয় আইন তাদের স্পর্শ করতে পারে না। অপরদিকে ধর্ম যেহেতু প্রমাণের ওপর নয় বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত, সে কারণে অশালীন কাজ যত গোপনেই করা হোক না কেন, ধর্মের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না। ধর্মের দৃষ্টি সর্বত্র বিরাজমান। সুতরাং নির্ভেজালভাবে ধর্মে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনেই হোক কোনো অবস্থাতেই অশ্লীল কাজ বা পশুসুলভ আচরণ করতে পারে না, করেও না। কারণ সে জানে ও বিশ্বাস করে, তার কোনো অন্যায় আচরণের জন্য প্রমাণের অভাবে দুনিয়ার বিচারে বেঁচে গেলেও ধর্মের বিচারে ধরা পড়বেই। গোপন কিংবা প্রকাশ্য সব ধরনের কাজেরই জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রয়েছে ধর্মীয় বিধানে। যেখানে জবাবদিহিতা আছে, সেখানে অন্যায় থাকে না। এ জবাবদিহিতাই সব কিছুর রক্ষাকবচ।
#সমাজ ও রাষ্ট্র হচ্ছে মানুষের জন্য মানুষ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে ধর্ম হচ্ছে মানুষের জন্য মহান রাব্বুল আলামিন কর্তৃক প্রদত্ত বিধি-বিধান। সমাজ ও রাষ্ট্রের গঠন যেহেতু মানুষ দ্বারা সম্পন্ন হয়, এজন্য এর গঠন কাঠামো এক ও অভিন্ন নয়। এক এক সমাজের জীবনাচার এক এক রকম। এক রাষ্ট্রের বিধি-বিধানের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের বিধি-বিধানের যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। এক সমাজে যেটা বর্জিত অন্য সমাজে তা সমাদৃত। এক সময়ে যা নিন্দিত অন্য সময়ে তা নন্দিত। এক সমাজে যা ভব্যতা অন্য সমাজে তা অসভ্যতা। কিন্তু ধর্মীয় বিধি-বিধানে এসবের কোনো ভিন্নতা নেই। সব সমাজে সব সময়ে এক ও অভিন্ন। তাই দেখা যায়, নৈতিক মূল্যবোধ উজ্জীবিত রাখতে সমাজ ও রাষ্ট্রের চেয়ে ধর্ম বেশি কার্যকর। একই ধর্মবিশ্বাসে মানুষ যে দেশে যে সমাজেই বসবাস করুক না কেন, তাদের মূল্যবোধ এক।
#ধর্ম তিনভাবে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করছে।
১. সরাসরি এসব কর্মকা- নিষিদ্ধ করে দিয়ে।
২. এসব কাজের কারণ বা রুট চিহ্নিত করে তা নিষিদ্ধ করে দিয়ে।
৩. কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন বাধ্যতামূলক করে দিয়ে। উদাহরণস্বরূপ সন্ত্রাসের কথা বলা যেতে পারে। যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী বা আতঙ্ক সৃষ্টি করা ধর্মে প্রথমেই নিষিদ্ধ। তারপর সন্ত্রাস যেসব কারণে সংঘটিত হয় কিংবা সন্ত্রাসী হতে উদ্বুদ্ধ করে এসব কর্মকা- নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সন্ত্রাসের চিন্তাই যেন কারও মনে না আসে সেজন্য নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি বাধ্যতামূলকভাবে পালনের বিধান করে দিয়ে মানুষের আত্মিক উন্নতির পথ করে দিয়েছে। তাই দেখা যায়, যারা নিয়মিতভাবে নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করে তাদের দ্বারা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত হয় না। ব্যতিক্রম শুধু তারাই, যারা এসব ধর্মকর্ম অসৎ উদ্দেশ্যে করে।
#মানব প্রকৃতিকে দুভাগ করলে এক ভাগে পড়ে নৈতিক ও আত্মিক বিষয়াবলী। অপরভাগে পড়ে অনৈতিক ও ভোগপ্রবণতা। মানব প্রকৃতির নৈতিক বিষয়গুলো উপেক্ষিত হলে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটলে সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব চলে যায় অপরাধীদের হাতে। সমাজের সর্বস্তরে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য চলে। সঠিক ও ন্যায্য কাজটি করার ব্যাপারে কারও কোনো উদ্যম থাকে না। হত্যা, ধর্ষণ, খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ, প্রতারণা, জুলুম, নির্যাতন ইত্যাদি যাবতীয় অপরাধকর্ম নিয়ে কেউ কিছু বলতে চায় না, নির্বিকার হয়ে যায়। বিবেকের কোনো তাড়নাই অবশিষ্ট থাকে না। সংস্কৃতি ও সভ্যতার ভিত্তি যে আত্মিক ও অসাম্প্রদায়িকতা তা হারিয়ে যায়। গোত্র ও সম্প্রদায়ের মোহ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে লোকসমাগম বাড়তে থাকলেও তারা শুধু ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে মশগুল থাকে, ধর্মের প্রকৃত বাণী ও শিক্ষা আত্মস্থ করার ফুরসত থাকে না। অবশ্য এ অবস্থা চিরস্থায়ী হয় না। কোনো এক সময় এসে এর প্রতিরোধ হয়। প্রতিবিধান হয়। আর এ প্রতিরোধের নেতৃত্বে যিনি থাকেন, তিনি হয়ে যান ইতিহাসের প্রাণ পুরুষ। তিনি হতে পারেন কোনো সমাজসংস্কারক, রাজনৈতিক নেতা কিংবা ধর্মীয় পুরুষ।
❤❤❤❤❤❤❤❤❤
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মোল্লা
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
মানব কল্যাণ সংস্থা বাংলাদেশ ।
বিদ্র: (লিখার মধ্যে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)